blog_image
  • 27 এপ্র 2025
প্রাইমারি কৃষির গণ্ডি পেরিয়ে: এখনই সময় কৃষিকে নতুন চোখে দেখার
কৃষিতে এখনো টাকা আছে—বরং আগের চেয়ে বেশি। কিন্তু সেই টাকাটা এখন ছড়িয়ে গেছে, ভাগ হয়ে গেছে। শুধু ধান, দুধ বা সবজি উৎপাদন করে বাজারে বেচে ফেলার দিন শেষ। এখন প্রয়োজন কৃষিকে ভিন্নভাবে দেখা, ভ্যালু অ্যাড করা, আর সবচেয়ে বড় কথা—কৃষি থেকে তৈরি হওয়া সম্পূর্ণ “ইকোসিস্টেম” এর অংশ হওয়া।

চিন্তা করুন—একজন গরুর খামারি লিটারপ্রতি ৫০-৬০ টাকা দামে দুধ বিক্রি করছেন। অথচ সেই দুধ থেকেই যখন ঘি, চিজ, ছানা বা মিষ্টি তৈরি হচ্ছে, তখন এক লিটার ঘি বিক্রি হচ্ছে ২০০০ টাকা পর্যন্ত। লাভটা কোথায় যাচ্ছে? যারা প্রক্রিয়াজাত করছে তারা পাচ্ছে, আর কৃষক থেকে যাচ্ছে একদম শুরুতে।

একইভাবে এক কৃষক সরিষা চাষ করছেন, কিন্তু তার পাশের জমিতে যদি ৫টা মৌমাছির বাক্স বসান, তাহলে সেই সরিষা ফুল থেকেই উৎপাদন হবে খাঁটি মধু। আর সেই মধুর লিটারপ্রতি দাম কত? ১০০০-১২০০ টাকা! অথচ ওই কৃষক তো শুধু সরিষা বিক্রি করছেন ৫০-৬০ টাকায়।

সমাধান কী?
প্রাইমারি উৎপাদনের পাশাপাশি ভ্যালু অ্যাডেড প্রোডাক্ট এবং কৃষির আশেপাশের সম্ভাবনাগুলোকেও ধরতে হবে।

ভবিষ্যতের কৃষককে হতে হবে স্ট্র্যাটেজিক

১. প্রোডাক্ট ডাইভার্সিফিকেশন: দুধ বিক্রি না করে ঘি তৈরি, সরিষা চাষের সাথে মধু চাষ, ভুট্টা দিয়ে পশুখাদ্য বানানো—এসব ভাবনা এখন দরকার।

২. কনজিউমার ফোকাস: চাল, ঘি, আটা, তেল—কনজিউমার যেটা ব্যবহার করে, সেটাই কৃষককে ভাবতে হবে। তার উৎপাদনের কিছু অংশ দিয়ে হলেও তাকে প্রক্রিয়াজাতকরণ শিখতে হবে।

৩. কনটেন্ট ক্যাশিং: ইউটিউবে কৃষির ভিডিও বানিয়ে মানুষ ইনকাম করছে। কৃষক নিজেই কেন সেটা করবে না? জমির কাজ, ফসল তোলা, গরুর পরিচর্যা—এসব দিয়ে তৈরি হতে পারে লাভজনক একটি ভিডিও সিরিজ।

৪. এগ্রো-ট্যুরিজম: নবান্ন, ধান কাটা, মাছ ধরা—এই জীবনযাত্রা এখন অনেকের আগ্রহের বিষয়। শহরের মানুষ এসব দেখে শিখতে চায়, বাচ্চাদের শেখাতে চায়। কৃষকের নিজের বাড়িই হতে পারে হোমস্টে। শুদ্ধ গ্রামীণ খাবার আর বাস্তব অভিজ্ঞতা—এটাই হতে পারে আগামী দিনের বড় আয়।

৫. ক্রাফট ও হ্যান্ডমেইড প্রোডাক্ট: পাট চাষ করছেন? পাট দিয়ে তৈরি হতে পারে মোড়া, ঝুড়ি, পুতুল। শুধু পাট বিক্রি না করে চিন্তা করতে হবে প্রোডাক্ট নিয়ে।

৬. বীজ উৎপাদন: অল্প জমিতে দেশি সবজি চাষ করছেন? সেই সবজির বীজ সংরক্ষণ করে বিক্রি করুন—বাজারে এখন দেশি বীজের ভালো চাহিদা।

 

শেষ কথা: কৃষকই হবেন কৃষির কেন্দ্রবিন্দু

বাজার ব্যবস্থায় এখন যারা বেশি লাভ করছে, তারা অনেকেই কৃষক না—তারা কৃষির আশেপাশের সাপ্লাই চেইন, প্রক্রিয়াজাতকরণ আর বিপণন কৌশল ধরতে পেরেছে।
এখন সময় এসেছে এই সুযোগগুলো যেন আসল কৃষক ধরতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করার। কৃষকের লাভ মানেই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, এবং কৃষিকে একটি সম্মানজনক পেশা হিসেবে গড়ে তোলা।

সুখের খামার কৃষির এই নতুন দৃষ্টিভঙ্গিকে স্বাগত জানায়। আমরা চাই, কৃষক শুধু উৎপাদকই না—হোক উদ্যোক্তা, হোক নির্মাতা, হোক ভবিষ্যতের অনুপ্রেরণা।

লেখক: জোবায়ের রুবেল
ফাউন্ডার, সুখের খামার
WhatsApp Logo